top of page
shohid minar.jpg

 একুশের ছড়া ও কবিতা

দিলু নাসের 

ফেব্রুয়ারির বাঁশি

 

 

ফেব্রোয়ারীর আকাশ জুড়ে

 বর্ণমালার আলো

ভাষার মাসে এই আলোতে

প্রাণের প্রদীপ জ্বালো। 

হৃদয় মাঝে কৃষ্ণচুড়ার

আগুন লাগে যদি

সেই আগুনে লাল যে হবে 

পদ্মা মেঘনা নদী।

 

অন্ধকারের বন্ধ দুয়ার 

ভাঙতে যদি চাও

গহীন গাঙে নৌকা আবার 

উজান স্রোতে বাও।

বর্ণমালার সুরে বাজাও

প্রাণের ভেতর বাঁশি

আমার সোনার বাংলা আমি -

তোমায় ভালোবাসি…

 

 

ফাগুন

 

আসলে ফাগুন

লাগে যে আগুন

কৃষ্ণচুড়ার ডালে

কাঁপে মা-র বুক

ভিজে দুই চোখ

আঁচলের আড়ালে।

 

ছেলের শোকে

মায়ের বুকে

বাজলে করুন সুর

বর্ণমালা

ঘুচায় জ্বালা

ঝরায় যে রোদ্দুর।

 

ফাগুন ঘ্রানে

মায়ের প্রাণে

বাজায় যখন বাশি

মা হেসে কয়

বাংলা আমি

তোমায় ভালোবাসি।

কারন তোমার

জন্য আমার

ছেলের রাঙা খুনে

ঢাকা শহর

ভেসে ছিলো

সেই কবে ফালগুনে ।

 

মায়ের ছেলের

গায়ের খুনে

কৃষ্ণচুড়ার ডাল

ফাগুন এলে

তাই প্রতিবার

হয় যে ফুলে লাল ।

 

ফাগুন মানে

আগুন ঝরা

বজ্র কঠিন দিন

যার লাগি আজ

বাংলা ভাষা

বিশ্বে অমলিন।

 

তোমার জন্য 

 

তোমার জন্য আমার কবিতা তোমার জন্য গান

তোমার হাসিতে হৃদয় জুড়ানো তোমার হাসিতে প্রাণ।

তোমাকে জড়িয়ে প্রথম পেয়েছি জীবনের সন্ধান 

ভুলতে পারিনা যেখানেই যাই তোমার এই প্রতিদান।

তুমি তো আমায় দিয়েছো প্রথম সূর্য্যের বৈভব

তোমার দুপুর দিয়েছে নুপুর দুরন্ত শৈশব। 

আমার মনের সবটুকু রঙ সবটুকু আরাধনা 

তোমার জন্য আমার সুর আর শব্দের ব্যঞ্জনা। 


তুমি আমার স্বপ্ন সাহস আমার অহংকার 

তুমি আমার কাব্য গানের শ্রেষ্ঠ অলংকার। 

তোমার সঙ্গে রয়েছে আমার সু-গভীর বন্ধন

তুমি আমার হৃদয়ে দিয়েছো সুবাসিত চন্দন। 


তোমার কাছে আমার রয়েছে লক্ষ হাজার ঋণ

যতো দূরে যাই হৃদয়েতে তাই তুমি থাকো অমলিন।

যতোবার আমি তোমাকে দেখি চোখে অপরূপ লাগে

তোমাকে ভাবলে মনের ভিতরে নতুন স্বপ্ন জাগে। 

তোমাকে ঘিরে স্বপ্ন আমার তোমাকে নিয়েই আশা 

তুমি যে আমার এক জীবনের শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা। 

রক্তের আখরে হৃদয়ে লিখেছি তোমার নামটি আমি 

তোমার জন্য আজিবন রবো মিছিলে অগ্রগামী।

তোমার জন্য বাঁচবো এবং তোমার জন্য মরবো 

তোমার মুখের হাসির জন্য প্রাণপণে আমি লড়বো। 

জীবনের সাথে মিশে আছো তুমি বিপ্লবে সংগ্রামে 

এ জীবন বাজী রাখতে যে রাজি হে প্রিয় তোমার নামে। 

তোমার বুকে লাগলে আচড় আমি দেই চিৎকার 

তোমার শোকে আমার বুকে বয়ে যায় হাহাকার। 

তোমার মুখটি মলিন দেখলে পরাণ উথলি উঠে

তোমার সুখে আমার বুকে লক্ষ গোলাপ ফুটে।

পৃথীবির পথে নানান ভুমি দেখি যে নিত্যদিন

আমার চোখে তোমার রূপটি লাগে যে সবচে  রঙিন।

আলো ঝলমল আকাশ চুম্বি অট্রালিকার ভীড়ে

আমার এ মন বারবার শুধু তোমাকেই দেখে ফিরে।

তোমার মতন রূপের মাধুরী বিশ্বে কোথাও নাই 

তাই পৃথিবীর যেখানেই থাকি তোমাকে দেখতে পাই। 

প্রেয়সীর ঠোঁঠে তুমি যে রয়েছো ভালোবাসা চুম্বনে 

দিবস রজনী আমিযে কাটাই তোমার স্বপ্ন বুনে। 

তোমার হাসিতে আমার মুখেতে ফুটে ওঠে যেন হাসি 

"আমার সোনার বাংলা আমি -

তোমায় ভালোবাসি"

 

 

ভালোবাসা

 

এই দেশটাকে আমি খুব ভালোবাসি
যেদিকে তাকাই সবুজের সমারোহ
কোথাও সাগর নীল জল রাশি রাশি
নদী ও পাহাড়ে জড়ানো মায়ার মোহ।

এদেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি
কীযে অপরূপ চেয়ে থাকি অবিরত
কিষাণের সাথে নগ্ন দু'পায়ে হাঁটি
যত দূরে যাই মন যেতে চায় তত।

ইতিহাস আর ঐতিহ্যের দেশ
এদেশের বুকে বহু বীর শুয়ে আছে
তাদের কাহিনী বলেও হবে না শেষ
আমার অনেক ঋণ এদেশের কাছে।

মাথার উপরে সাদা মেঘমালা ভাসে
নিচে বিলে ঝিলে শাপলা মেয়ের হাসি
তারা ঝিলমিল রাতেরে সাজায় আকাশে
প্রাণ ভরে তাই এদেশের ভালোবাসি।

যত দূরে যাই থাকি তবু কাছাকাছি
এ মাটির বুকে বার বার ফিরে আসি
প্রকৃতির টানে প্রাণে প্রাণে মিশে আছি
তাইতো এদেশ প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি।

dilu naser.jpg

দিলু নাসের :  আমার  ভালবাসার বিশ্বস্ত মোহনা

দিলু নাসের, শিকড় পরিবারেরই সদস্য। সেই জন্মলগ্ন থেকে দিলু আছেন শিকড়ে সাথে সম্পৃক্ত। আজ দিলু নাসেরের জন্ম দিনে শিকড়ের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন। শুভ জন্মদিন।

ফারুক আহমেদ রনি

ছড়ার রাজকুমার দিলু নাসের। আজ তাঁর জন্মদিন, আমার প্রিয় ছড়াকার, যদিও কবিতা ও গল্পে সমানভাবে তিনি সাবলীল তবুও আমি তার ছড়ার ভক্ত হিসাবে লেখার শুরুতেই ছড়ার ভেতর দিয়েই আমরা একজন দিলু নাসেরকে দেখতে চাই।

দিলু নাসের নিজেই বলেন;

আমার ছড়া একটু কড়া

আমার ছড়া তিক্ত

আমার ছড়া কটূ-কষা

একটু অতিরিক্ত।

আমার ছড়া আগুনঝরা

দিন বলদের যন্ত্র

আমার ছড়ায় ছড়িয়ে আছে

ঘুম তাড়াবার মন্ত্র।

 

দিলু নাসের, নামটাই যেন ছড়ার ছন্দ। দিলু নাসের আমার বন্ধু। গত প্রায় তিনযুগ আমরা পাশাপাশি হাঁটছি..

লন্ডনের অলিগলি ধরে হেটেচলা আমাদের পায়ের চিহ্ন বলে দেবে, আমরা এখানে বাংলা সাহিত্যের শব্দ ও ছন্দের বুনন করে চলেছি দীর্ঘদিন। শতবছরেরও আগে এখানে বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতির পতাকাবাহী জাহাজ নোঙর করেছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা, আমরা আজ তাদেরই উত্তরসূরি। বাংলা টাউন, বঙ্গবন্ধু স্কুল, ওসমানী স্কুল, কবি নজরুল সেন্টার, কবি নজরুল স্কুল, ঠাকুর সেন্টার, বাংলাদেশ সেন্টার, শাহজালাল এস্টেট, আলতাব আলী পার্ক, শহীদ মিনার, প্রতিবছর আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তিতে উদযাপিত বাংলা নববর্ষের আয়োজন, সংহতি বাংলা কবিতা উৎসব, নাট্যোৎসব । তাছাড়াও প্রতিদিনের আয়োজনে রয়েছে নানা সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই বিলেতের এতসব নানা আয়োজনে রয়েছে আমাদের দিলু, রনিদের শ্রম আর উচ্ছ্বাসের বিমোহন স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নকে লালন করে আমাদের পথচলা.. অবিরাম।

দিলু নাসের আমার বন্ধু বলে নয়, দিলু নাসের আমার প্রিয় ছড়াকার ও কবি বলে আমি তার কর্মের প্রতি মুগ্ধ, শ্রদ্ধাশীল। তাইতো - তার ছড়ায় ছন্দ ছড়ায়, আমার কথা নয়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথা। মুগ্ধ আর আবেগাপ্লুত হয়ে দিলুর কবিতা পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। ছড়া মনে দিলু নাসের। ছড়ায় ছড়ায় দিলু বঙ্গবন্ধুর জীবনকাহিনী তুলে ধরেন মুজিব নামের অর্থ - তার ছড়াগ্রন্থে..

বাংলা ও বাঙালির কাছে

মুজিব নামের অর্থ আছে।

তাহার সাথে অনেক কিছু যুক্ত

মুজিব ছাড়া বাংলানামের

দেশ না হতো মুক্ত।

দেশে থাকতে আমাদের পরিচয় শুধুমাত্র সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে। সরাসরি আমাদের প্রথম দেখা ১৯৮৬ সালে। প্রথম পরিচয় বিকলেনের (বর্তমান বাংলাটাউন) আড্ডায়, খুব সম্ভব আলাউদ্দিন রেস্তোরায়। তারপর দুজনে আলতাব আলী পার্কে (বর্তমান শহীদ মিনার অবস্থিত), বসে গলা ছেড়ে গান ধরি- তোমরা ভুলে গেছো মল্লিকাদির নাম.. আমার প্রিয় গানের মধ্যে একটি। তারপর দিলু নাসেরের কণ্ঠে তার সেই ছড়া। আমার প্রিয় ছড়াটি;

জমির আলির একটি ছেলে

লন্ডনে বাস করে

তাইতো ছেলে পাঠায় দেশে

লক্ষটাকা মাস পরে।

টাকা পেয়ে জমির আলি

ইচ্ছেমত ত্রাস করেন

একটু পেতে দেরি হলে

ভীষণ হাহুতাশ করেন।

জমির আলি ভাবেন ছেলে

বিলেত টাকার চাষ করে

কিন্ত ছেলে পাঠায় টাকা

জীবনটারে নাশ করে।

আজ থেকে ৩৫ বছর আগের সেই প্রথম দেখা দিলু নাসের, আজও তরুণ, যুবক, বয়স বেড়েছে কি কমেছে আমরা আড্ডায় বসলে এখনো সেই তারুণ্যের প্রাণবন্ত স্বপ্নচারী। আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি যেমন দীর্ঘদিন দেখে আসছি, আমরা এখনো আদিগন্ত খেয়ালে উদাসীন। রঙিন স্বপ্নে উপরে ওঠার সিঁড়িগুলো কখনো আমাদের পাথেয় ছিলোনা। আমরা পথবেয়ে আসছি এক অলিক বিস্ময় নিয়ে, সে বিস্ময়; আমরা বিলেতে পরিপূর্ণ একখণ্ড বাংলাদেশ দেখবো, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির আলোকিত রশ্মি একদিন জ্বলজ্বল করবে বিলেতের আকাশজুড়ে। দিলু নাসেরকে নিয়ে আমার গল্পের শেষ নেই। আমরা তিনযুগ একপ্রাণ। দিলু নাসের একটি ঈর্ষনীয় নাম। দিলু দৌড়ে আমার চেয়ে অনেক আগে, কারণ, দিলু ঈর্ষাকে প্রাধান্য দেননি। সাহিত্যের গতি তার পদচারণের মত, দিলু হাঁটেন তার পদচারনায় ছন্দ দোল খায়। দিলু এতো দ্রুত শব্দকে ছন্দে রূপ দিতে পারেন সেটা তার কাছে না থাকলে বুঝা মুশকিল। দিলু নাসেরের প্রথম ছড়াগ্রন্থ বিষ-কামড় প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। প্রকাশক আমাদেরই আরেক বন্ধু স্বাধীন খসরু। দিলু নাসেরের ছড়ার ভক্ত। সেই গ্রন্থ দিলু উৎসর্গ করলেন বাবা মাকে এবং একুশে ভুমিষ্ঠজাত আবির নাসের ত্রয়ীস্বত্তাকে উদ্দেশ্য করে, লিখলেন;

দেশকে যারা দেশ ভাবেনা, ভাবছে দাবার গুটি

তাদের দেখা পেলেই জোরে ধরিস চেপে টুটি

ও খোকা তুই তাদের দিকে ঘেন্না ছুঁড়ে দিস

থু ছুঁড়ে দিস মুখের উপর মেখে থাকুক বিষ..

যৌতুক নিয়ে দিলু লিখলেন চিরন্তন সেই বাণী;

মৌ ঝুর ঝুর মৌ

গলায় ফাঁসি কাল দিয়েছে

পাশের বাড়ির বৌ।

বৌ- এর বাবা দেয়নি তারে

সাজিয়ে সোনার কাঁকন-হারে

তাই দিয়েছে স্বামীর হাতে

গায়ের তাজা লৌ।

মৌ ঝুর ঝুর মৌ

এমনি করে মরছে হাজার

গাঁও গেরামের বৌ।

এবং এমনি করে দিলু লিখে যাচ্ছেন সমাজ আর দেশ নিয়ে তার ছড়া, যার ছড়া মানুষকে প্ররণা যোগায়, মানুষের কাছে তিনি পৌছে যান খুব সহজে, যেমন;

আজকে যাদের কথায়,

এবংকার্যতে নেই মিল

তাদের বুকে লাথি মারো

লাগাও ঘুষি কিল।

মঞ্চে উঠে মিথ্যে বলে

কুড়ায় যারা তালি

সেই শালাদের মুখেতে

দাওমাখিয়ে চুনকালি।

দিলু নাসেরের জন্ম ১৯৬৪ সালে, বৃহত্তর সিলেটের সৈয়দপুরে গ্রামে। তার পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে সমানভাবে সম্পৃক্ত, তার লেখালেখি অনেকটা যেন উত্তরাধিকার সূত্রে। স্টেজ কাঁপানো দিলু নাসের যখন আবৃতি করেন দর্শক শুধু শুনেই যান, যেন দিলুর কণ্ঠ বন্ধ না হয়, মাইক্রোফোনটি যেন বেহাত না হয়। দিলু নাসের ছোট বড় সবার কাছে সমানপ্রিয়।

আজ তার জন্মদিনে আমার ভালবাসা শুধু না তার কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা নিরন্তর...

শুভ জন্মদিন বন্ধু। বেঁচে থাকো মানুষের মাঝে হাজার বছর।

dilu and roni at stage.jpg
bottom of page